সিনচ্যান কার্টুনের নাম শোনে নি এমন বাচ্চা বোধহয় ভূভারতে পাওয়া যাবে না। বছর পাঁচেকের ছোট্ট ছেলে সিনচ্যানের দুরন্তপনা আমাদের ছোটোবেলাকার সঙ্গী। আর নোহারা পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের ছেলেবেলার নস্টালজিয়া। সকালের স্কুল থেকে ফিরেই হোক বা দুপুরে খাওয়ার সময়, হাঙ্গামা চ্যানেল আর সিনচ্যান ছিল বরাবরের নিত্যসঙ্গী।

20 00 18 images
Pinterest

এহেন সিনচ্যান, যে আমাদের স্মার্টফোন বিহীন ছোটোবেলাকে মাতিয়ে রাখত চূড়ান্ত খুশিতে, আমরা অনেকেই হয় তো জানি না তার পিছনে লুকিয়ে আছে একটা ইতিহাস। আর হাসিখুশি দুষ্টুমি ভরা সিনচ্যানের সেই ইতিহাস হাসির নয় মোটেই। বরং বাস্তবে সিনচ্যানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিষাদের করুণ সুর। কী সেই গল্প? তা জেনে নেওয়ার আগে জেনে নেওয়া দরকার সিনচ্যান কার্টুনের মূল থিম গল্প।

সিনচ্যান কার্টুনের মূল গল্প:

সিনচ্যান
pinterest

একসময়ে হাঙ্গামা, কার্টুন নেটওয়ার্ক, নিক, পোগো কিংবা ডিজনি চ্যানেল জুড়ে যে কটি প্রোগ্রাম আসর মাতিয়ে রাখত, তাদের মধ্যে সিনচ্যানের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলে সিনচ্যান, জাপানের নোহারা পরিবারের সদস্য। তাঁর বাড়িতে আছে তাঁর বাবা হিরোশি নোহারা (সংক্ষেপে হ্যারি), মা মিসায়ে নোহারা (সংক্ষেপে মিৎসি)। আর আছে ছোটো বোন হিমাওয়ারি। এছাড়াও সিনচ্যানের একটি পোষা কুকুর রয়েছে যার নাম শিরো।সিনচ্যানের প্রিয় কার্টুন একশন কামেন। এছাড়াও সিনচ্যানের কোয়ান্টাম রোবো ও বুরি-বুরি সাইমনও পছন্দ। সিনচ্যান সবসময় একশন কামেনের সাথে দেখা করার স্বপ্ন দেখে।

ছোট্ট সিনচ্যান রোজ স্কুলে যায়। তার দুরন্তপনায় অস্থির বাড়ির লোক থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষক, সকলেই। এমনকি ক্লাসের বন্ধুদের মাঝেও দুষ্টুমিতে সেরা সিনচ্যানই। নানা রকম দুষ্টু বুদ্ধির মাধ্যমে সেই তাই বন্ধুদের মাঝে নায়কের ভূমিকা নিয়ে ফেলেছে। বস্তুত সিনচ্যানের সীমাহীন দুষ্টুমির জন্যেই বিখ্যাত এই কার্টুন। তার নানা খুনসুটিই ছিল ৯০ এর দশকের বাচ্চাদের সর্বক্ষণের সঙ্গী।

সিনচ্যান কার্টুনের উদ্ভব:

20 01 14 images
Hindi panda

সিনচ্যান কার্টুন ১৯৯২ সালে প্রথম টিভি আসাহি চ্যানেল এ প্রচারিত হয় এবং এখনো চলছে। ভারতে সাধারণত এটি হাঙ্গামা টিভিতে প্রচারিত হয়।ইওশিতো উসুই নামের জাপানের জনপ্রিয় কমেডি লেখক সিনচ্যান কার্টুনটি লিখেছেন। এটি একটি জাপানি মাঙ্গা কমিক। জাপানি ভাষায় এর প্রকাশক হলেন ফুতাবাসা। এছাড়া ইংরেজি ভাষাতেও এই কার্টুন প্রকাশিত হয়। মোটামুটি ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই কার্টুন টিভির পর্দা মাতিয়ে রেখেছিল। এই কার্টুনের পরিচালকদের মধ্যে ছিলেন মিৎসুরু হোঙ্গো, কেইলচি হারা এবং ইউজি মুতো। এখনও পর্যন্ত সিনচ্যানের মোট ১ হাজারের বেশি পর্ব প্রকাশিত হয়েছে।

সিনচ্যান কার্টুনের পিছনে বাস্তব ইতিহাস:

20 00 54 images
brainly.in

সিনচ্যান কার্টুন তৈরির পিছনে আছে এক বাস্তব ঘটনা। বলা যায়, বাস্তবের চরিত্রকেই কার্টুনের আকারে সর্বসমক্ষে তুলে ধরা হয়েছে। বাস্তবের সিনচ্যানের নাম সিনোশুকে নোহারা। পাঁচ বছরের ছোট্টো সিনোশুকে নোহারা ছিল আমাদের সকলের চেনা সিনচ্যানের মতোই দুষ্টু। তার দুষ্টুমির জন্যেই সকলে তাকে ভালোও বাসতো। কিন্তু পৃথিবীর বুকে খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় নি দুষ্টু সিনোশুকের জীবন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় চিরতরে থেমে যায় তার দুষ্টুমি।

সিনচ্যানের দুর্ঘটনা হয়েছিল কীভাবে?

20 01 46 images
YouTube

শোনা যায়, দুষ্টু সিনচ্যান নিজের বোনকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল। একবার সে তার মায়ের সঙ্গে শপিং মলে বাজার করতে গিয়েছিল। সে সময় তাদের নজর এড়িয়ে ছোটো বোন হামাগুড়ি দিতে দিতে গিয়ে পড়ে গাড়ির রাস্তায়। মা দেখতে না পেলেও বোনকে বিপজ্জনক অবস্থায় দেখতে পায় সিনোশুকে তথা সিনচ্যান। আর সঙ্গে সঙ্গে বোনকে বাঁচাতে সেও ছুটে যায় গাড়ির রাস্তায়। তারপরের ঘটনা আর বলে দেওয়ার দরকার পড়ে না। জাপানের ব্যস্ত রাজপথে দুটো ছোটো ছোটো ছেলে মেয়ে মুহূর্তের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

সিনচ্যানের দুর্ঘটনার পরবর্তী কাহিনী:

19 59 45 images
Otakukart

সিনোশুকের মৃত্যুর পর তাঁর মা মিসিই দীর্ঘদিন ধরে ডিপ্রেশনে ভোগেন। দুই সন্তানকে হারিয়ে একলা সময়ে তিনি তাঁর হারানো ছেলে মেয়ের নানা স্কেচ আঁকতেন তিনি। পাঁচ বছরের জীবনে সিনোশুকের যাবতীয় খুনসুটি অসাধারণ ভাবে ধরা পড়েছিল তাঁর মায়ের আঁকা সেই সমস্ত ছবিতে। পরবর্তীকালে মিসিইয়ের সেই ছবি গুলো নজর কাড়ে জাপানের জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট ইওশিতা উসাইয়ের। তিনি ওই ছবি গুলিকে একটি জাপানি ম্যাগাজিনে ধারাবাহিক ভাবে কমিকস হিসেবে প্রকাশ করেন। সিনচ্যানের সেই কমিকস জাপানে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করলে একে নিয়ে কার্টুন প্রোগ্রাম তৈরি করার কথা ভাবা হয়। মায়ের ক্রেয়ন রং দিয়ে আঁকা ছবিগুলিই সিনচ্যান কার্টুনের মূল ভিত্তি হওয়ায় জাপানে এর নাম হয় ‘ক্রেয়ন সিনচ্যান’।

20 02 21 images
pinterest

বর্তমানে সিনচ্যান কার্টুন সারা দুনিয়ার নানা ভাষায় ভাষান্তর করা হয়েছে। এই ভাষাগুলির মধ্যে আছে: ডেনীয়, ইংরেজি,বাংলা, ওলন্দাজ, জার্মান, গ্রিক, ফরাসি, ইতালীয়, পর্তুগিজ, স্পেনীয়, গালিসীয়, কাতালান, বাস্ক, পোলীয়, চীনা, কোরীয়, হিন্দি, হিব্রু, তেলুগু, তামিল, তাগালোগ, ইন্দোনেশীয়, মালয়, খমের, থাই ইত্যাদি।