নিজস্ব সংবাদদাতা: গত ৩-৪ দিন আগের ঘটনা। একটি বহুল প্রচারিত বাংলা সংবাদপত্রে শিল্পীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন দিলীপ ঘোষ। বলেছিলেন, “শিল্পীরা রাজনীতি করতে এলে রগড়ে দেব।” সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে শিল্পীদের এই ‘রগড়ে দেওয়ার’ কথা বলে স্বাভাবিকভাবেই নয়া বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি। দিন কয়েক আগে টলিউডের কয়েকজন শিল্পীর তৈরি ‘নিজেদের মতে, নিজেদের গান’ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই এই মন্তব্য করেন তিনি। সেই গানে যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই পরিচিত বিজেপি বিরোধী হিসেবে।

দিলীপের এই ‘রগড়ে দেওয়ার’ কথায় এবার আপত্তি জানালো টলিউডের একাংশ। সেই তালিকায় রয়েছেন বাংলার তারকা অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরাও। দিলীপ ঘোষের নাম না নিয়েই তাঁকে কটাক্ষ করে ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করেছেন অঙ্কুশ। তিনি লিখেছেন, “ইশ সব জায়গাতেই যদি একটু শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখে লোক নেওয়া হতো, তা হলে যে কেউ শিল্পীদের রগড়ে দিয়ে যেত না”। অর্থাৎ, শিক্ষার অভাবেই যে দিলীপ বাবু এমন একটা মন্তব্য করেছেন, তেমনটাই দাবি করছেন অভিনেতা।

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে যখন টলিউডের বহু শিল্পী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নাম লিখিয়েছেন, অঙ্কুশ তখনও নিজের গায়ে রাজনীতির রং লাগতে দেননি। তবে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে নিজের মন্তব্য প্রকাশ করতে কখনওই পিছপা হননি তিনি। টেলিভিশন চ্যানেলে নির্দিষ্ট একটি দলের নেতার ভাষণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার অভিযোগ থেকে শুরু করে সহকর্মীদের রাজনীতিতে যোগদান নিয়ে ঠাট্টা, সব ক্ষেত্রেই নিজের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হল না।

শুধু অঙ্কুশ নন, বিজেপি-র সদস্য বলেই টলি মহলে পরিচিত অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্রও সমর্থন করতে পারেননি তাঁর দলনেতার এই মন্তব্য। অভিনেত্রীর কথায়, “দিলীপবাবুকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তাঁর এই মন্তব্য সমর্থন করতে পারিনি। এখন রাজ্য রাজনীতিতে টলিউডের শিল্পীদের প্রসঙ্গ এনে শাসক বা বিরোধী পক্ষ যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করছে, সেগুলো একেবারেই ভাল লাগছে না।”

এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গেরুয়া শিবিরের তারকা প্রার্থী বনি বলেছেন, “আমি বুঝতেই পারলাম না, কেন এমন মন্তব্য করলেন রাজ্য সভাপতি। খুব খারাপ লেগেছে। ওঁর মুখ থেকে এ ধরনের কথা আশা করিনি। দলের সবাই যথেষ্ট সম্মান করছিলেন। হঠাৎ এ রকম একটা মন্তব্য শিল্পীদের নিয়ে! একেবারেই ঠিক নয়। যিনি যে পেশাতেই থাকুন, দিনের শেষে তিনি মানুষ। দিলীপ ঘোষ নিজেই বলেছেন, সবাই দেশের নাগরিক। এর পর এই কথা আমি অন্তত মেনে নিতে পারছি না।”

গেরুয়া শিবিরের আরও এক নতুন তারকা সদস্য কৌশিক রায়ের গলায় যদিও উল্টো সুর। তাঁর কথায়, “দিলীপবাবু কোন প্রসঙ্গে কী বলেছেন সেটা আমি জানি না। তবে যে দলে এতজন তারকা প্রার্থী, সাংসদ রয়েছেন সেই দলের নেতা শিল্পীদের নিয়ে কোনও কুমন্তব্য করবেন বলে আমি মনে করি না। ওঁর বক্তব্যকে কোনও ভাবে ঘুরিয়ে দেখানো হচ্ছে বলে আমার মনে হয়।” ‘খড়কুটো’ ধারাবাহিকের সুবাদে তিনি এইমুহূর্তে জনপ্রিয়তার শিখরে। পর্দার ‘সৌজন্য’ বাস্তবেও সৌজন্য বজায় রাখায় বিশ্বাসী। তাঁর কথায়, “অন্য কোনও পেশা থেকে কেউ যদি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে আসেন, আমরা কিন্তু তাঁকে রগড়ে দেব না। বরং সাহায্যই করব”।

এদিকে, যেই গানটি ঘিরে এত বিতর্ক, এত আলোচনা, মূলত ফ্যাসিবাদ এবং ধর্মের রাজনীতির বিরোধিতা করেই সেই গানটি লেখা হয়েছিল। আর সেই মিউজিক ভিডিওতে উপস্থিত শিল্পীদের মধ্যে একজন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। নেট মাধ্যমে দিলীপ ঘোষের ‘রগড়ে’ দেওয়ার মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনিও নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, বিজেপি-তে যে সব শিল্পীরা যোগদান করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও দিলীপের এই ‘রগড়ানি’ প্রযোজ্য কি না!