নিজস্ব সংবাদদাতা: গত কয়েকমাস ধরেই একের পর এক তৃণমূল নেতা দলে থেকে কাজ করতে না পারার অভিযোগ তুলে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এবং তাঁদের অনেককেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে গেরুয়া শিবির। সেই বিষয়টিকে কটাক্ষ করেই সম্প্রতি সিপিআইএম নেতা তথা কসবার প্রার্থী শতরূপ ঘোষের একটি বক্তব্য পেশ করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে শতরূপ বলছেন, সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী কারা হবেন তা বিমান বসু, অধীর চৌধুরী, আব্বাস সিদ্দিকী ঘোষণা করবেন। কিন্তু কারা প্রার্থী হবেন না তা তাঁরা বুক বাজিয়ে বলে দিতে পারেন। রাজ্যের ২৯৪টি আসনের কোথাও সংযুক্ত মোর্চা প্রাক্তন তৃণমূল নেতাকে প্রার্থী করবেন না।

তবে শতরূপের এই গর্বই রীতিমত ভেঙেচুরে গিয়েছে গতকাল আব্বাস সিদ্দিকীর দল সাত কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার পর। তাতে জ্বলজ্বল করছে হুগলির জাঙ্গিপাড়া কেন্দ্রে আইএসএফ প্রার্থী শেখ মইনুদ্দিন ওরফে বুদোর নাম। কে এই বুদো? সূত্র বলছে, ২০১৩-১৮ পর্যন্ত তিনি ছিলেন জাঙ্গিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং তৃণমূলের অবিসংবাদিত নেতা। এত দিন সিপিএম অভিযোগ করত জাঙ্গিপাড়া জোনাল অফিসে আগুন লাগানো, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের গাড়ি ভাঙচুর, প্রয়াত নেতা সুনীল সরকারকে লাঞ্ছিত করার পিছনে এই বুদোর হাতই ছিল। আর এবার তাঁকেই জোট শরিক প্রার্থী করায় ক্ষোভে ফুঁসছে একদা লালদুর্গ জাঙ্গিপাড়ার নেতা-কর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাঙ্গিপাড়ার এক প্রবীণ নেতা বলেন, “কর্মীদের সামনে আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। নেতাদের যোগ বিয়োগের অঙ্কে আমরা বলির পাঁঠা হচ্ছি। যাঁরা শ্রীরামপুর কুমিরজলা রোডে কাচের ঘরে বসে অঙ্ক কষে তাঁরা জানেনই না এলাকার পরিস্থিতি। এই সিদ্ধান্তটা আমাদের ওপর পুরো চাপিয়ে দেওয়া হল।” এরপরই তিনি বলেন, “প্লিজ, নাম লিখবেন না কিন্তু… মনের কথা বলে ফেললাম।”

প্রসঙ্গত, জাঙ্গিপাড়ার বিধানসভার মধ্যেই পড়ে ফুরফুরা শরিফ। সেখানে বামেদের সংগঠন এখনও মজবুত। মিছিল করলে দলের এই দুঃসময়েও সেখানে কয়েক হাজার লোক হয়। সেখানকার কর্মীদের বক্তব্য, যার নেতৃত্বে হামলা হয়েছে, যে কিনা পুলিশকে চাপ দিয়ে মিথ্যা কেস দিয়েছে, তার হয়ে এবার ভোট চাইতে হবে? এক যুব নেতার কথায়, “সংযুক্ত মোর্চার এই যদি প্রার্থী হয় তাহলে তো নিজেদের পরিবারের ভোটও পাব না।” সূত্রের খবর, গত কয়েক দিন ধরেই বুদোর নাম কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। এ নিয়ে নাকি জাঙ্গিপাড়ার সিপিআইএম নেতারা জেলা নেতৃত্বকে নিজেদের ক্ষোভের কথাও জানিয়েওছিলেন। তবে কোনো লাভ হয়নি। সবমিলিয়ে ভোটের আগে জোটের জটে ফেঁসে আরও চাপে বাম নেতাকর্মীরা।