খেলা হবে! না, খেলা শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চ্য়াটার্জি ও তাঁর বিশেষ বান্ধবী বৈশাখী ব্যানার্জির। তৃণমূলে সব পেয়েছির দেশে থেকে বিদ্রোহ করে বেরিয়ে এসে, বিজেপিতে যোগ দিয়ে শেষ অবধি লাভ হল না শোভন চ্য়াটার্জির। ব্যক্তিগত সম্পর্ক টানাপোড়েনের জেরে খুব স্বাভাবিকভাবেই কাননকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দলের ইমেজ বাঁচানোর চেয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু সেই সময় শোভনের হাতে বিজেপির অপশন থাকায়, ফুল বদলে নেন শোভন। আর শোভনের ফুল বদলে সঙ্গী হন তাঁর বিশেষ বান্ধবী বৈশাখীও। শোভনের বিজেপিকে দরকার ছিল, বিজেপিও শোভনকে। দিদির কাছের বৃত্তে থাকা শোভনকে পেয়ে বিজেপি দারুণ খুশি হয়েছিল। তবে সে খুশি পরে অস্বস্তিতে বদলাতে বেশি সময় নেয়নি।

ফুল বদলের পর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বলয়ের সুবিধা পেলেও অবশ্য শোভন সেভাবে কখনই পদ্মফুলে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। অনেক সময়ই অভিমানের কারণে বিজেপি-র সভায় যেতে গররাজি ছিলেন কানন ও বৈশাখি। তবে শেষমেশ মানভঞ্জনের পর দুজনে বিজেপির হয়ে প্রচারে যান। দুজনে দায়িত্বও পান। যে দিদি তাঁকে মেয়র থেকে মন্ত্রী, বরো চেয়ারম্যান থেকে কাউন্সিলার, দলের জেলা সভাপতির দায়িত্ব থেকে নানা কমিটির মাথায় বসিয়েছিলেন, সেই দিদির বিরুদ্ধেই চড়া সুরে আক্রমণও করেন শোভন।

আরও পড়ুন: ভাঙা পায়ের মমতা যেন আরও আক্রমণাত্মক: বলছে রাজনৈতিক মহল

কিন্তু না। শেষ অবধি শোভন-বৈশাখিকে হতাশই করল বিজেপি। দুজনের আশা ছিল দুজনেই প্রার্থী হবেন। শোভন শিবিরের পাখির চোখ ছিল বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে। যে কেন্দ্র থেকে শোভন গত দুবারের বিধায়ক। বেহালা পূর্বে নিজের ব্যক্তিগত প্রভাবও বেশ জমিয়েছিলেন শোভন। কিন্তু না। বেহালা পূর্ব শোভন বা বৈশাখী, কাউকে প্রার্থী না করে টলিউড অভিনেত্রী পায়েল সরকারকে প্রার্থী করে শোভন-বৈশাখিকে চরম হতাশ করে বিজেপি। এরপরই অভিমানে দল ছাড়েন দুজনে।

কিন্তু কেন শোভন-বৈশাখীকে হতাশ করল বিজেপি। ভুলটা কী শোভনরা করলেন বেশি করে! কারণ, শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব ব্যানার্জিদের কিন্তু বিজেপি সব ক্ষমতায় দিয়েছে। শুভেন্দুরা তো তাদের পছন্দের আসন পেয়েছেনই, পাশাপাশি তাঁদের সুপারিশ করা মানুষরা প্রার্থী হয়েছেন বলে খবর। তাহলে মমতার মন্ত্রিসভায় থাকা, কলকাতার মেয়র হয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে শোভনকে কেন ফ্রি-হ্যান্ড দিলেন না শাহ-নাড্ডারা। কারণ খুঁজতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শোভন-বৈশাখী বিজেপি-র সম্পদ হয়ে ওঠার থেকে দায় হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। শোভনদের অভিমানের কারণে দলে খারাপ বার্তা যায়। শোভন ভুলে গিয়েছিলেন, তৃণমূলের মত বিজেপি-তে ব্যক্তি প্রাধান্য নয়, সংগঠনই শেষ কথা বলে। শোভনের যোগদানের পরেও বেহালাতেও সেভাবে বিজেপি প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। বেহালায় যতটা হয়েছে তা সংগঠনের সামগ্রিক প্রভাবে। এমনও খবর বিভিন্ন সংস্থার করা রিসার্চের যে রিপোর্ট দিল্লি বিজেপির শীর্ষমহলে গিয়েছে, তাতে শোভন-বৈশাখীরা পাশ মার্ক পাননি। শোভনদের সভায় ভিড় হলেও সেটা ভোটে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাও কম ছিল বলেই নাকি দিল্লি বিজেপি নেতারা মনে করেছিলেন। বেহালা পূর্বে শোভন পত্নী রত্নাকে তৃণমূল প্রার্থী করায়, বিজেপির পারিবারিক বিবাদেও ঢুকতে চাইনি।

আর এতসব কারণে খেলা শুরুর আগেই খেলা শেষ হয়ে গেল শোভন-বৈশাখীর। অনেকেই বলছেন, বিজেপিতে যোগ দিয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্কের মারপ্যাঁচ ভুলে শোভন যদি মনদিয়ে বিজেপির সংগঠনটা বুঝে খেলতে নামতেন, তাহলে তাঁকে পদ্মকাঁটা খেত হত না। এটা অস্বীকার করে লাভ নেই, দিদির আশীর্বাদ আদায়ের পিছনে তাঁর নিজের দক্ষতাও ছিল। মেয়র হয়ে শহরের জন্য বড় কিছু কাজও করেছিলেন। দলেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল। কিন্তু ব্যক্তি সম্পর্কের চাপে শোভন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়লেন।