রাজ্যের রায়ে মেরুকরণের প্রভাব স্পষ্ট। গতবারের চেয়েও বেশি আসনে জিতে বাংলায় ক্ষমতায় এল তৃণমূল। রাজ্যে ২৯৪টি আসনের মধ্যে যে ২৯২টি-তে ভোট হয়েছিল তার মধ্যে তৃণমূল জিতল ২১৩টি-তে। সেখানে বিজেপি জিতল ৭৭টি-তে। কংগ্রেস, সিপিএম বা বাম দলের কোনও আসন পায়নি। ভোটের ফলেই পরিষ্কার এবারের ভোটে মেরুকরণে স্পষ্ট। দুই পক্ষের মাঝে তৃতীয় পক্ষকে চায়নি মানুষ। তাই এবার সিপিএম, কংগ্রেস নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। সিপিএম, কংগ্রেসের মত রাজ্যের নির্দল প্রার্থী-রাও একেবারেই ভোট পাননি। প্রতি ভোটেই দেখা যায় নির্দল প্রার্থীরা বড় ফ্যাক্টর হয়ে যান বেশ কিছু ক্ষেত্রে। কিন্তু এবার মেরুকরণের ভোটে তৃতীয় পক্ষের জায়গাই হল না। বিজেপিকে হারাতে মানুষ অন্য কাউকে ভোট দিয়ে, ভোটটা ‘নষ্ট’ করেননি। তাই রাজ্যের নির্দল প্রার্থীদের হাল এবার সর্বত্র খারাপ। কিন্তু নির্দলদের হতাশার মাঝে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী দীনেশ দাস।

আরও পড়ুন: ফলপ্রকাশের পরই বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব

নির্বাচনী প্রচারে যিনি সোশ্য়াল মিডিয়া সেনসেশান হয়ে উঠেছিলেন। এনেছিলেন রাজনীতির ময়দানে নতুন ট্রেন্ড । বেকারদের চাকরির মডেল, ঘরের মা বোনেদের কাজের উপায়কে সামনে রেখে তিনি ভোটে লড়েছিলেন। তাঁর স্লোগান ছিল, মোর নাম এইভাবে খ্যাত হোক, আমি বনগাঁর লোক। শেষ অবধি দীনেশ দাসের সেই আবেদনে মানুষ সাড়া দিল। না, ভোটে তিনি জেতেননি। মতুয়া গড়ের এই আসনে বিজেপি প্রার্থী অশোক কীর্তনিয়া ১০ হাজারেরও বেশি ভোটে হারান তৃণমূলের শ্যামলা রায়কে। এই আসনেও মেরুকরণ স্পষ্ট। সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম প্রার্থী পীযুষ কান্তি সাহা পান মাত্র ১৩ হাজার ৭৮০ ভোট। এই কেন্দ্রে মোট ১০ জন প্রার্থী ছিলেন। কলকাতা সহ দেশের নানা প্রান্তে ব্যবসা থাকা আইটি শিক্ষিত দীনেশ দাসকে ভোটে না দাঁড়াতে দেওয়ার চেষ্টাও চলছিল। মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় একেবারে শেষ মুহূর্তে তিনি প্রার্থীপদ জমা দিতে পেরেছিলেন।

ফলপ্রকাশের পর দেখা যায় দীনেশ দাস চার নম্বরে শেষ করেছেন। তিনি বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থী সুনীতি মল্লিকের থেকেও বেশি ভোট পান। তথ্য বলছে, এবার রাজ্যে গোঁজ প্রার্থীদের কথা বাদ দিলে, প্রকৃত নির্দল প্রার্থীরা গড়ে ২০০-২৫০টি ভোট পেয়েছেন। কিন্তু দীনেশ পেয়ে তাঁর প্রায় সাতগুণ বেশি ভোট। কোনও রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদ তাঁর মাথায় ছিল না। টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার চেষ্টা তাঁর ছিল না। ভোটে যুদ্ধে তাঁর সঙ্গী ছিল পরিশ্রম, জেদ আর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা। নির্বাচনের আগের দিনও ভোটের কাজ ফেলে তিনি বিপদে পড়া এক মহিলার পাশে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
ভোটের ফল নিয়ে কী বলবেন?
এমন প্রশ্ন করা হলে দীনেশ দাস হাসি মুখে বললেন, ”দেখুন আমি যা ভোট পেয়েছি তাতে দুটো কারণে খুশি-১) আমার আগের যে তিনজন প্রার্থী আছেন তারা প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত বড় রাজনৈতিক দলের কর্মী। ওঁরা ব্যক্তি হিসেবে নয়, দলের প্রতীকে ভোট পেয়েছে। তার মানে দল নয়, শুধু মানুষের সরাসরি ভোটের কথা বললে চতুর্থ স্থানে থেকে ব্যক্তি আমি জয় পেয়েছি। ২) এটাই আমার বিধানসভায় প্রথমবার ভোটে নামা। ২) নিজের সঙ্গে জেদ করেছিলাম কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থন না নিয়ে নিজেকে মানুষের সামনে নিয়ে যাবো। কোনও অর্থ, পেশিবল ছাড়া মানুষ আমায় ভোট দেয় কি না সেটা দেখব। সেটা হওয়ায় আমি খুশি। আমার ভোট আরও বাড়ত কিন্তু মেরুকরণের কারণে তা হয়নি।”

একেবারে খাঁটি নির্দল প্রার্থী হয়ে এত ভোট পাওয়ার পর আমার পরবর্তী কাজ কী হবে? এই কেন্দ্রে তো বিজেপি-তে জিতেছে, রাজ্যে তৃণমূল। কোন দিকে যাবেন? দীনেশ আবার হেসে বললেন, ” আমি যাবো মানুষের দিকে। বলা ভাল মানুষের পাশে। আমি কথা দিয়েছিলাম জিতি হারি মানুষের পাশে থাকব। সেই প্রতিশ্রুতি রেখে এখন থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ব। কলকাতায় করোনার দু:সময়ে মানুষের পাশের থাকার কাজে এখন ব্যস্ত। অক্সিজেন থেকে শুরু করে করোনা যুদ্ধে লড়ার সরঞ্জাম, মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সোশ্য়াল মিডিয়া ব্যবহার করছি। আমার টিম কাজ করছে মানুষের পাশে থাকায়। বনগাঁয় মানুষের পাশে থাকার কাজও শুরু করব ক দিনের মধ্যে।”